রাশি বিজ্ঞান 



শিক্ষার্থীদের যোগ্যতাকে সাংখ্যমানে প্রকাশ করে তার প্রকৃত তাৎপর্য নির্ণয় করতে গণিতের যে শাখা সাহায্য করে, তা-ই হল রাশিবিজ্ঞান (Statistics) ।

Tate- এর অভিমত অনুযায়ী, রাশিবিজ্ঞান হল গবেষণার এক উপকরণ হিসাবে সংখ্যামূলক তথ্যাবলির সংগ্ৰহ ও ব্যাখ্যা করার পদ্ধতি ।

                     -: উৎপত্তি :- 

রাশিবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল "Statistics" । Statistics শব্দটি লাতিন শব্দ  "Status", ইতালীয় শব্দ  " Statista" বা জাপান শব্দ  "Statistik" ।

আবার অনেকে মনে করেন  "Statistics" শব্দটি. "State" বা রাষ্ট্র থেকে এসেছে ।

                        -: অর্থ :- 

রাশিবিজ্ঞান বা  "Statistics" শব্দটির অর্থ হল 'সংখ্যমান বা পরিসংখ্যান' ।


            -: শিক্ষায় রাশিবিজ্ঞান :- 

শিক্ষা পরিকল্পনা, প্রয়োগ, গবেষণা, শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন ইত্যাদি ক্ষেএে রাশিবিজ্ঞানের যেসব নীতি ও পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়, তাই শিক্ষায় রাশিবিজ্ঞান নামে পরিচিত ।

 -: শিক্ষায় রাশিবিজ্ঞানের উপযোগিতা :-

শিক্ষা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ঘটনায় প্রাপ্ত তথ্যের সঠিক বিশ্লেষণ ও তাৎপর্য নির্ণয় করতে সাহায্য করে শিক্ষায় রাশিবিজ্ঞান ।
শিক্ষায় রাশিবিজ্ঞানের উপযোগিতা হল - 

১. গাণিতিক যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত : রাশিবিজ্ঞানের প্রয়োগ শিক্ষাগত পরিমাপ গুলিকে সহজভাবে প্রকাশ করতে এবং সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলিকে গাণিতিক যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করে ।

২. নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য সিদ্ধান্ত গ্ৰহন :  রাশিবিজ্ঞানের জ্ঞান শিক্ষাগত তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেএে প্রয়োগ করলে যে-কোনো সিদ্ধান্তের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায় এবং যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত অপেক্ষাকৃত নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হবে ।

৩. শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা : শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ প্রবণতা সম্পর্কে রাশিবিজ্ঞান ধারণা দেয় এবং সেই প্রবণতার ভিওিতে পরিকল্পনা রচনা করা হয় ।

৪. অভীক্ষার আদর্শীকরণ : শিক্ষাক্ষেত্রে যেসকল অভীক্ষার প্রয়োগ ঘটে তা প্রস্তুতকরণে এবং আদর্শীকরণের ক্ষেএে রাশিবিজ্ঞানের যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে ।

৫. সঠিক পরিকল্পনা রচনা : শিক্ষার সঠিক অগ্ৰগতি ও শিক্ষার্থীর অগ্ৰগতির জন্য শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করতে রাশিবিজ্ঞান সাহায্য করে ।
৬. উপাদান বিশ্লেষণ : রাশিবিজ্ঞান শিক্ষামূলক গবেষণার ক্ষেত্রে যেসকল উপাদান প্রয়োজন হয় সেগুলির সঠিক বিশ্লেষণের জন্য রাশিবিজ্ঞান উপযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।


              -: রাশিবিজ্ঞান পদ্ধতি:

তথ্যসংগ্ৰহ :- কোনো বস্তু, ব্যক্তি বা ঘটনার স্বরুপ সম্পর্কে সঠিক ও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে প্রথমে সকলরকম তথ্যসংগ্ৰহ করা প্রয়োজন ।

১. তথ্য : তথ্য হল কোনো ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনার প্রতিক্রিয়া লিপিবদ্ধকরণের প্রক্রিয়া ।

যেমন - মেধা, সাফল্য, বয়স, উচ্চতা ইত্যাদি ।

২. তথ্য সংগ্রহ : শিক্ষাক্ষেত্র থেকে বা অন্যান্য ক্ষেএ থেকে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগের দ্বারা প্রাপ্ত তথ্যের সম্পূর্ণকরণের প্রক্রিয়াকে বলা হয় তথ্যসংগ্ৰহ ।

৩. তথ্য সংগ্রহের কৌশল : তথ্যসংগ্ৰহের কৌশলগুলি হল - পর্যবেক্ষণ, শিক্ষামূলক বীবরণী, শ্রেণি পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা, ধারাবাহিক কার্য বিবরণী ইত্যাদি ।

৪. তথ্যের ধরন : তথ্যের বৈশিষ্ট্য এবং উৎস অনুসারে কয়েকটি ভাগে করা যায়, তা নিম্নে আলোচনা করা হল - 

বৈশিষ্ট্য অনুসারে তথ্যকে দুইভাগে ভাগ করা যায় ।

a. গুণগত তথ্য : যেসব তথ্যকে সংখ্যার সাহায্যে প্রকাশ করা যায় না, কিন্তু বিশেষ গুনের ভিওিতে পরস্পরের থেকে পৃথক করা যায়, তাকে গুণগত তথ্য বলে ।

যেমন - বুদ্ধিমওা, মেধা, প্রত্যাশা ইত্যাদি ।

b. পরিমাণগত তথ্য : যেসব তথ্যকে সংখ্যার দ্বারা প্রকাশ করা যায়, তাকে পরিমাণগত তথ্য বলে ।

যেমন - ওজন, বয়স, উচ্চতা,আয় ইত্যাদি ।

উৎস অনুসারে তথ্যকে দুইভাগে ভাগ করা যায় ।

a. প্রাথমিক তথ্য : যেসব তথ্য মূল উৎস থেকে অর্থাৎ, সরাসরি শিক্ষাক্ষেত্র বা কার্যক্ষেএ থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাকে প্রাথমিক তথ্য বলে ।

যেমন - গবেষক বা পর্যবেক্ষণ বা শিক্ষক সরাসরি শ্রেণিকক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ।

b. গৌণ তথ্য : মূল উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য যখন অন্য কোনো প্রয়োজনে পুনরায় সংগ্ৰহ করা হয়, তখন তাকে গৌণ তথ্য বলে ।

স্কোর : শিক্ষাবিজ্ঞান বা মনোবিদ্যায় ব্যক্তি - সংক্রান্ত যেসব সংখ্যা ও তথ্যাবলি পাওয়া যায় সেগুলিকে রাশিবিজ্ঞানের পরিভাষায় স্কোর বলে। 

চল : গাণিতিক অর্থে পরিমাপের ফল হিসাবে যে সংখ্যাগুলি পাওয়া যায় তাকেই বলা হয় চল

চলের ধরন : চলগুলিকে ২ ভাগে ভাগ করা যায় । তা নিম্নে আলোচনা করা হল - 

a. বিচ্ছিন্ন চল : যে চলের স্কেলে কোনো ছেদ বা ফাঁক থাকে, তাই হল বিচ্ছিন্ন চল
যেমন - একটি শ্রেণিতে ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা 30 ও 27 জন । এক্ষেত্রে 30 জন এবং 27 জনকে আর বিভাজন করে দেখানো যায় না ।

b. অবিচ্ছিন্ন চল : যে চলের স্কেলে কোনো বিরাম বা ছেদ থাকে না, তাকেই বলা হয় অবিচ্ছিন্ন চল ।
যেমন : কোনো শিশুর দৈহিক বয়স, মানসিক বয়স ইত্যাদি ।